বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৩

যোগাযোগমন্ত্রী বললেন আন্দোলনে জনবিচ্ছিন্ন হবে বিরোধী দল

আন্দোলনে জনবিচ্ছিন্ন হবে বিরোধী দল: যোগাযোগমন্ত্রীযোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সহিংস আন্দোলনের পথে গেলে বিরোধী দল জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
বৃহস্পতিবার ফেনী সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, "বিরোধী দলের আন্দোলনের মরা গাঙ্গে এখন আর জোয়ার আসবে না। নেতাকর্মীরা এখন সবাই নির্বাচনের মুড-এ আছে, আন্দোলনের মুড-এ নয়।"
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, "একতরফা নির্বাচনের কোনো চিন্তাই আমরা করছি না বরং প্রধান বিরোধী দলকে প্রধান নির্বাচনী প্রতিপক্ষ ভেবেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
বিরোধী দলকে 'সহিংস পথ' পরিহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান যোগাযোগমন্ত্রী। এসময় ফেনীর পৌর মেয়র মো. নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।

জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সন্ধ্যায়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণদেবেন।প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ একথা নিশ্চিত করেছেন
 তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।
 প্রসঙ্গত, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আগামী দশম সংসদ নির্বাচন হবে।সংসদের চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে কার্যউপদেষ্টা কমিটির।এর মধ্যে 'নির্দলীয় সরকার পদ্ধতির' বিল সংসদে পাস না করলে ২৫ অক্টোবর থেকে সরকার পতনের কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের বলেছেন, ২৪ অক্টোবরের পর সংসদ চলতে পারবে না, এটা সংবিধানের কোথাও লেখা নেই।এরই মধ্যে আগামী ২৫ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগও সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও প্রস্তুতিতে ২৫ অক্টোবর নিয়ে জনগণের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩


পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সাদ্দামের বাম পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে। এসময় তার সঙ্গী সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী গোলাম রব্বানী তুফানের পায়ে গুলি করা হয়েছে। স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। উভয়ের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, পার্শ্ববর্তী ধরমপুর মিজানের মোড় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম, কাউসার আহমেদ কৌশিক ও সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী গোলাম রাব্বানী তুফান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের বহনকারী অটোরিকশাটি ছৈমুদ্দিনের মোড়ে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা জন শিবিরকর্মী পথ অবরোধ করে গুলি করে। তারা সাদ্দামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং বাম পায়ের রগ কেটে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সাবেক ছাত্রলীগকর্মী তুফানের বাম পায়ে গুলি লাগে । তবে তাদের সঙ্গী অপর ছাত্রলীগকর্মী কৌশিক দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হন। পরে স্থানীয়রা সাদ্দাম ও তুফানকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের জরুরী বিভাগের চিকিত্সক ডা. আহম্মেদ তারেক সাংবাদিকদের বলেন, আহতদের শরীরে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। সাদ্দামের পিঠ, মাথা ও বাম পা গুরুতর জখম হয়েছে। এছাড়া তার বাম পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে। আর তুফানের বাম পায়ে গুলি লেগেছে। তিনি বলেন, আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে হামলার ঘটনায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে দাবি করে দুপুর একটার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরপর তারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক একঘন্টা অবরোধ করে রাখে। পরে প্রক্টর ও পুলিশের আশ্বাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা আজ প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ্দামের পায়ের রগ কেটে দেয়া ছাড়াও কুপিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম করেছে। আরেক ছাত্রলীগ কর্মী তুফানের বাম পায়ে গুলি করেছে। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা আরো কঠোর আন্দোলন করব।

রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৩

ভারতের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য হিস্যাগুলো আদায়ে তড়িঘড়ি নেই। ছিটমহল বিনিময় হলো না, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হলো না, ফেলানী হত্যার বিচার পেলাম না, দুই দেশের বাণিজ্যিক ঘাটতির কোনো সুরাহা হলো না। সেখানে দেশের মানুষের প্রতিবাদের মুখে এত তড়িঘড়ি করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হলো কেন? এটা আমাদের স্বার্থে নয়। ভারতীয় পুঁজির স্বার্থে। গত শুক্রবার বাংলাভিশনের টকশো 'নিউজ অ্যান্ড ভিউজ'- এ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এ কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে যেখানে বিদ্যুতের মূল্য পড়বে চার টাকার মতো। আর ভারতের এ বিদ্যুৎ আট টাকার ওপরে পড়বে। এখানে সুন্দরবন কিভাবে নষ্ট হবে, গাছপালা, মাছ, পশুপাখির ওপরে কী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। অনেক গবেষক তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। এরপরও সরকার যদি এ পদক্ষেপ নেয় সেটা জনস্বার্থে নয়। এখানে সরকার জনগণের দিকে তাকিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নাকি অন্য কারও বাণিজ্যিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজটি করছেন এ প্রশ্ন থেকেই যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাতিলের দাবিতে লংমার্চ করলাম। সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে। কেন্দ্রটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন মহল থেকে যে প্রশ্নগুলো এসেছে তার কোনো সন্তোষজনক জবাব সরকার থেকে আসেনি। তারা যেসব যুক্তি দেখিয়েছে তা ধোপে টেকেনি। পার্লামেন্টেও বিষয়টি তোলা হয়নি। সরকার যে কথাগুলো বলেছে তার পাল্টা যুক্তিগুলো নিয়ে একটি বিতর্কও হলো না। অথচ ২২ তারিখ উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়ে ৫ তারিখেই উদ্বোধন করার ব্যবস্থা হলো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসে আমাদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে পারলেন না। আর এখানে একটি বাণিজ্যিক বিষয় যুক্ত। প্রকল্পটি উদ্বোধন এত জরুরি হয়ে গেল কেন? তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি এবং দেশের মানুষের পক্ষ থেকে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস প্রসঙ্গে বাসদ নেতা বলেন, আগে স্কাইপির ঘটনা ঘটল। সেটি সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। এতে সরকার ও ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বহীনতা প্রমাণ হলো। যুদ্ধাপরাধ বিচার সবাই চায়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা যখন পূরণ হচ্ছে তখন সেটিকে বিতর্কিত করার কোনো যুক্তি ছিল না। খালেকুজ্জামান বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন আছে, বিতর্ক আছে তাই আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল। অতীতেও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে, কথায় ও কাজে সংশয় বেড়েছে। কিভাবে রায় ফাঁস হলো প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে তদন্ত করে স্পষ্ট করা দরকার। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা ঠিক নয়।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20234#sthash.V3iUU7cb.dpuf
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের স্বার্থে নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য হিস্যাগুলো আদায়ে তড়িঘড়ি নেই। ছিটমহল বিনিময় হলো না, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হলো না, ফেলানী হত্যার বিচার পেলাম না, দুই দেশের বাণিজ্যিক ঘাটতির কোনো সুরাহা হলো না। সেখানে দেশের মানুষের প্রতিবাদের মুখে এত তড়িঘড়ি করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হলো কেন? এটা আমাদের স্বার্থে নয়। ভারতীয় পুঁজির স্বার্থে। গত শুক্রবার বাংলাভিশনের টকশো 'নিউজ অ্যান্ড ভিউজ'- এ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এ কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে যেখানে বিদ্যুতের মূল্য পড়বে চার টাকার মতো। আর ভারতের এ বিদ্যুৎ আট টাকার ওপরে পড়বে। এখানে সুন্দরবন কিভাবে নষ্ট হবে, গাছপালা, মাছ, পশুপাখির ওপরে কী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। অনেক গবেষক তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। এরপরও সরকার যদি এ পদক্ষেপ নেয় সেটা জনস্বার্থে নয়। এখানে সরকার জনগণের দিকে তাকিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নাকি অন্য কারও বাণিজ্যিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজটি করছেন এ প্রশ্ন থেকেই যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাতিলের দাবিতে লংমার্চ করলাম। সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে। কেন্দ্রটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন মহল থেকে যে প্রশ্নগুলো এসেছে তার কোনো সন্তোষজনক জবাব সরকার থেকে আসেনি। তারা যেসব যুক্তি দেখিয়েছে তা ধোপে টেকেনি। পার্লামেন্টেও বিষয়টি তোলা হয়নি। সরকার যে কথাগুলো বলেছে তার পাল্টা যুক্তিগুলো নিয়ে একটি বিতর্কও হলো না। অথচ ২২ তারিখ উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়ে ৫ তারিখেই উদ্বোধন করার ব্যবস্থা হলো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসে আমাদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে পারলেন না। আর এখানে একটি বাণিজ্যিক বিষয় যুক্ত। প্রকল্পটি উদ্বোধন এত জরুরি হয়ে গেল কেন? তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি এবং দেশের মানুষের পক্ষ থেকে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস প্রসঙ্গে বাসদ নেতা বলেন, আগে স্কাইপির ঘটনা ঘটল। সেটি সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। এতে সরকার ও ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বহীনতা প্রমাণ হলো। যুদ্ধাপরাধ বিচার সবাই চায়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা যখন পূরণ হচ্ছে তখন সেটিকে বিতর্কিত করার কোনো যুক্তি ছিল না। খালেকুজ্জামান বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন আছে, বিতর্ক আছে তাই আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল। অতীতেও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে, কথায় ও কাজে সংশয় বেড়েছে। কিভাবে রায় ফাঁস হলো প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে তদন্ত করে স্পষ্ট করা দরকার। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা ঠিক নয়।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20234#sthash.V3iUU7cb.dpufরামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের স্বার্থে নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য হিস্যাগুলো আদায়ে তড়িঘড়ি নেই। ছিটমহল বিনিময় হলো না, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হলো না, ফেলানী হত্যার বিচার পেলাম না, দুই দেশের বাণিজ্যিক ঘাটতির কোনো সুরাহা হলো না। সেখানে দেশের মানুষের প্রতিবাদের মুখে এত তড়িঘড়ি করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হলো কেন? এটা আমাদের স্বার্থে নয়। ভারতীয় পুঁজির স্বার্থে। গত শুক্রবার বাংলাভিশনের টকশো 'নিউজ অ্যান্ড ভিউজ'- এ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এ কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে যেখানে বিদ্যুতের মূল্য পড়বে চার টাকার মতো। আর ভারতের এ বিদ্যুৎ আট টাকার ওপরে পড়বে। এখানে সুন্দরবন কিভাবে নষ্ট হবে, গাছপালা, মাছ, পশুপাখির ওপরে কী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। অনেক গবেষক তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। এরপরও সরকার যদি এ পদক্ষেপ নেয় সেটা জনস্বার্থে নয়। এখানে সরকার জনগণের দিকে তাকিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নাকি অন্য কারও বাণিজ্যিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজটি করছেন এ প্রশ্ন থেকেই যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাতিলের দাবিতে লংমার্চ করলাম। সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে। কেন্দ্রটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন মহল থেকে যে প্রশ্নগুলো এসেছে তার কোনো সন্তোষজনক জবাব সরকার থেকে আসেনি। তারা যেসব যুক্তি দেখিয়েছে তা ধোপে টেকেনি। পার্লামেন্টেও বিষয়টি তোলা হয়নি। সরকার যে কথাগুলো বলেছে তার পাল্টা যুক্তিগুলো নিয়ে একটি বিতর্কও হলো না। অথচ ২২ তারিখ উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়ে ৫ তারিখেই উদ্বোধন করার ব্যবস্থা হলো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসে আমাদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে পারলেন না। আর এখানে একটি বাণিজ্যিক বিষয় যুক্ত। প্রকল্পটি উদ্বোধন এত জরুরি হয়ে গেল কেন? তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি এবং দেশের মানুষের পক্ষ থেকে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস প্রসঙ্গে বাসদ নেতা বলেন, আগে স্কাইপির ঘটনা ঘটল। সেটি সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। এতে সরকার ও ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বহীনতা প্রমাণ হলো। যুদ্ধাপরাধ বিচার সবাই চায়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা যখন পূরণ হচ্ছে তখন সেটিকে বিতর্কিত করার কোনো যুক্তি ছিল না। খালেকুজ্জামান বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন আছে, বিতর্ক আছে তাই আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল। অতীতেও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে, কথায় ও কাজে সংশয় বেড়েছে। কিভাবে রায় ফাঁস হলো প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে তদন্ত করে স্পষ্ট করা দরকার। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা ঠিক নয়।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20234#sthash.V3iUU7cb.dpuf
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের স্বার্থে নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য হিস্যাগুলো আদায়ে তড়িঘড়ি নেই। ছিটমহল বিনিময় হলো না, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হলো না, ফেলানী হত্যার বিচার পেলাম না, দুই দেশের বাণিজ্যিক ঘাটতির কোনো সুরাহা হলো না। সেখানে দেশের মানুষের প্রতিবাদের মুখে এত তড়িঘড়ি করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হলো কেন? এটা আমাদের স্বার্থে নয়। ভারতীয় পুঁজির স্বার্থে। গত শুক্রবার বাংলাভিশনের টকশো 'নিউজ অ্যান্ড ভিউজ'- এ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এ কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে যেখানে বিদ্যুতের মূল্য পড়বে চার টাকার মতো। আর ভারতের এ বিদ্যুৎ আট টাকার ওপরে পড়বে। এখানে সুন্দরবন কিভাবে নষ্ট হবে, গাছপালা, মাছ, পশুপাখির ওপরে কী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। অনেক গবেষক তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। এরপরও সরকার যদি এ পদক্ষেপ নেয় সেটা জনস্বার্থে নয়। এখানে সরকার জনগণের দিকে তাকিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নাকি অন্য কারও বাণিজ্যিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজটি করছেন এ প্রশ্ন থেকেই যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাতিলের দাবিতে লংমার্চ করলাম। সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে। কেন্দ্রটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন মহল থেকে যে প্রশ্নগুলো এসেছে তার কোনো সন্তোষজনক জবাব সরকার থেকে আসেনি। তারা যেসব যুক্তি দেখিয়েছে তা ধোপে টেকেনি। পার্লামেন্টেও বিষয়টি তোলা হয়নি। সরকার যে কথাগুলো বলেছে তার পাল্টা যুক্তিগুলো নিয়ে একটি বিতর্কও হলো না। অথচ ২২ তারিখ উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়ে ৫ তারিখেই উদ্বোধন করার ব্যবস্থা হলো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসে আমাদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে পারলেন না। আর এখানে একটি বাণিজ্যিক বিষয় যুক্ত। প্রকল্পটি উদ্বোধন এত জরুরি হয়ে গেল কেন? তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি এবং দেশের মানুষের পক্ষ থেকে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস প্রসঙ্গে বাসদ নেতা বলেন, আগে স্কাইপির ঘটনা ঘটল। সেটি সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। এতে সরকার ও ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বহীনতা প্রমাণ হলো। যুদ্ধাপরাধ বিচার সবাই চায়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা যখন পূরণ হচ্ছে তখন সেটিকে বিতর্কিত করার কোনো যুক্তি ছিল না। খালেকুজ্জামান বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন আছে, বিতর্ক আছে তাই আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল। অতীতেও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে, কথায় ও কাজে সংশয় বেড়েছে। কিভাবে রায় ফাঁস হলো প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে তদন্ত করে স্পষ্ট করা দরকার। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা ঠিক নয়।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20234#sthash.V3iUU7cb.dpuf
সিলেটের জনসভায় খালেদা জিয়া
মাহমুদ আজহার ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে
পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি' গঠন করে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্র্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে এখন থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করা হবে।' রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এটা উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ১৮ দলীয় জোট এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সিলেটসহ সারা দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন বেগম জিয়া। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবির আকুতি ছিল বিরোধীদলীয় নেতাসহ প্রায় সব বক্তার কণ্ঠেই। এদিকে জনসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বেগম জিয়া।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিদেশিদের চাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এককভাবে নির্বাচন করলে তা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সংবিধান অনুসরণ করে আপনি বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে রাজি হলেন না কেন? ২০০৭ সালের নির্বাচন মানলে আমরাও আজকে আপনার কথা মেনে নিতাম। আপনি তো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আপনার অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? এ জন্যই আপনার অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই চিৎকার করেন না কেন, আপনাকে বিদায় নিতেই হবে।
২৪ অক্টোবরের পর জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সময় শেষ। এ সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ২৫ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনার দলের অনেকে এখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে পকেটে টিকিট কেটে ওপেন ভিসা নিয়ে ঘুরছেন। সংগ্রাম কমিটি হলে আপনি দেখবেন আপনার বামে, ডানে, সামনে, পেছনে কেউ নেই। তখন কেবল আমরাই থাকব। আমরাই আপনাকে রক্ষা করব। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে রাখব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এখনো বলছি, আপনি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। যত দিন মেয়াদ আছে, আপনারা থাকুন। তবে একক নির্বাচন হলে রাজপথে দেখা হবে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জনসভার চারপাশে ছিল নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে তার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ইলিয়াস আলীর ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল নিজেই ডিজিটাল ব্যানারে মডেল হয়। তার আকুতি ছিল_ 'আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দাও'। ইলিয়াস আলীর ডিজিটাল ব্যানারের পাশাপাশি মাঠের পূর্বদিকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল_ 'সিলেট উন্নয়নের রূপকার সাইফুর রহমান : ছবি কথা বলে'।
জনসভার কর্দমাক্ত মাঠেও মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। মাঠের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। 
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে এই মাদ্রাসা মাঠে বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দুই বছর পর একই মাঠে তার অনুপস্থিতিতে জনসভায় সব বক্তাই তাকে স্মরণ করেন এবং অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
জনসভায় ১৮ দলীয় নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামা ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাম্মী আখতার এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লুদি প্রমুখ বক্তব্য দেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার। জনসভার শুরুতেই সিলেটবাসীর উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। একটা দাবিও আছে। সেটা কী জানেন? বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক। শহীদ জিয়া এ সিলেটের পুণ্যভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। সেখানে আমাদের শমসের মবিনও ছিলেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, মেয়র আরিফকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। আগামীতে সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন। ক্ষমতায় গেলে সিলেটের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথাও জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি জোট আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন, সিলেট চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টায় দ্রুত ট্রেন সার্ভিস ও একটি ইপিজেড করা হবে। এ সময় জনসভায় স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পরে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলেন। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারও চাকরি যাবে না। বরং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বদলি করা হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, তারা সুবিচার পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বহু মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এর জবাব দিতে হবে। পিলখানা বিদ্রোহের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় তারা কোনো গুলি চালাতে পারেনি। ভাইদের বাঁচাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তিনি হেফাজতের সমাবেশে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাপের চেয়েও খারাপ। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে করা যায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এতে করে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে টিপাইমুখ বাঁধও হতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায়? অবিলম্বে তাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
স্বামীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান লুনার : স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান জানান সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লুনা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার জনসভায় তার আসার কথা ছিল না। এসেছেন শুধু সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। লুনা বলেন, তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সহযোগিতা। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। সিলেটবাসীর কাছে বিচার রেখে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিচার আপনাদের কাছে দিলাম। আপনারা বিচার করবেন।
শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে খালেদা জিয়া : জনসভার আগেই হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বেগম জিয়া। বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জিয়ারত করেন শাহজালালের মাজার। দুই মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়া বেলা ৩টায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
ইলিয়াসের শূন্যতা : জনসভায় প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গত বছরের ১১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রোডমার্চ করে সিলেটে আসেন খালেদা জিয়া। ওই জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। কিন্তু এ জনসভায় মঞ্চে ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস আলীর এই শূন্যতা অনুধাবন করেন প্রত্যেক বক্তা তাদের স্ব স্ব বক্তৃতায়।
জোট নেতাদের বক্তব্য : কর্নেল অলি আহমদ বলেন, জাতির এই দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালিদের হাত থেকে দেশকে চিরতরে মুক্ত করতে হবে। আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের হাতে আর মাত্র ৪৮০ ঘণ্টা সময় আছে। এরপর তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। সিটি নির্বাচনে সিলেটবাসী ইলিয়াস আলী গুমের জবাব দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের আর মাত্র ২০ দিন বাকি। এখন শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে চলবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। সরকার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20179#sthash.YDNq7OWc.dpufসিলেটের জনসভায় খালেদা জিয়াসিলেটের জনসভায় খালেদা জিয়াসিলেটের জনসভায় খালেদা জিয়াসিলেটের জনসভায় খালেদা জিয়াসিলেটের জনসভায় খালেদা জিয়াসিলেটের জনসভায় খালেদা জিয়াসিলেটের জনসভায় খালেদা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের স্বার্থে নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য হিস্যাগুলো আদায়ে তড়িঘড়ি নেই। ছিটমহল বিনিময় হলো না, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হলো না, ফেলানী হত্যার বিচার পেলাম না, দুই দেশের বাণিজ্যিক ঘাটতির কোনো সুরাহা হলো না। সেখানে দেশের মানুষের প্রতিবাদের মুখে এত তড়িঘড়ি করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হলো কেন? এটা আমাদের স্বার্থে নয়। ভারতীয় পুঁজির স্বার্থে। গত শুক্রবার বাংলাভিশনের টকশো 'নিউজ অ্যান্ড ভিউজ'- এ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এ কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে যেখানে বিদ্যুতের মূল্য পড়বে চার টাকার মতো। আর ভারতের এ বিদ্যুৎ আট টাকার ওপরে পড়বে। এখানে সুন্দরবন কিভাবে নষ্ট হবে, গাছপালা, মাছ, পশুপাখির ওপরে কী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। অনেক গবেষক তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। এরপরও সরকার যদি এ পদক্ষেপ নেয় সেটা জনস্বার্থে নয়। এখানে সরকার জনগণের দিকে তাকিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নাকি অন্য কারও বাণিজ্যিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজটি করছেন এ প্রশ্ন থেকেই যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাতিলের দাবিতে লংমার্চ করলাম। সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে। কেন্দ্রটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন মহল থেকে যে প্রশ্নগুলো এসেছে তার কোনো সন্তোষজনক জবাব সরকার থেকে আসেনি। তারা যেসব যুক্তি দেখিয়েছে তা ধোপে টেকেনি। পার্লামেন্টেও বিষয়টি তোলা হয়নি। সরকার যে কথাগুলো বলেছে তার পাল্টা যুক্তিগুলো নিয়ে একটি বিতর্কও হলো না। অথচ ২২ তারিখ উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়ে ৫ তারিখেই উদ্বোধন করার ব্যবস্থা হলো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসে আমাদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে পারলেন না। আর এখানে একটি বাণিজ্যিক বিষয় যুক্ত। প্রকল্পটি উদ্বোধন এত জরুরি হয়ে গেল কেন? তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি এবং দেশের মানুষের পক্ষ থেকে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস প্রসঙ্গে বাসদ নেতা বলেন, আগে স্কাইপির ঘটনা ঘটল। সেটি সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। এতে সরকার ও ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বহীনতা প্রমাণ হলো। যুদ্ধাপরাধ বিচার সবাই চায়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা যখন পূরণ হচ্ছে তখন সেটিকে বিতর্কিত করার কোনো যুক্তি ছিল না। খালেকুজ্জামান বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন আছে, বিতর্ক আছে তাই আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল। অতীতেও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে, কথায় ও কাজে সংশয় বেড়েছে। কিভাবে রায় ফাঁস হলো প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে তদন্ত করে স্পষ্ট করা দরকার। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা ঠিক নয়।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20234#sthash.V3iUU7cb.dpufআজহার ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকেSCXXCX
পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি' গঠন করে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্র্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে এখন থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করা হবে।' রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এটা উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ১৮ দলীয় জোট এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সিলেটসহ সারা দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন বেগম জিয়া। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবির আকুতি ছিল বিরোধীদলীয় নেতাসহ প্রায় সব বক্তার কণ্ঠেই। এদিকে জনসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বেগম জিয়া।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিদেশিদের চাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এককভাবে নির্বাচন করলে তা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সংবিধান অনুসরণ করে আপনি বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে রাজি হলেন না কেন? ২০০৭ সালের নির্বাচন মানলে আমরাও আজকে আপনার কথা মেনে নিতাম। আপনি তো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আপনার অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? এ জন্যই আপনার অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই চিৎকার করেন না কেন, আপনাকে বিদায় নিতেই হবে।
২৪ অক্টোবরের পর জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সময় শেষ। এ সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ২৫ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনার দলের অনেকে এখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে পকেটে টিকিট কেটে ওপেন ভিসা নিয়ে ঘুরছেন। সংগ্রাম কমিটি হলে আপনি দেখবেন আপনার বামে, ডানে, সামনে, পেছনে কেউ নেই। তখন কেবল আমরাই থাকব। আমরাই আপনাকে রক্ষা করব। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে রাখব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এখনো বলছি, আপনি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। যত দিন মেয়াদ আছে, আপনারা থাকুন। তবে একক নির্বাচন হলে রাজপথে দেখা হবে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জনসভার চারপাশে ছিল নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে তার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ইলিয়াস আলীর ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল নিজেই ডিজিটাল ব্যানারে মডেল হয়। তার আকুতি ছিল_ 'আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দাও'। ইলিয়াস আলীর ডিজিটাল ব্যানারের পাশাপাশি মাঠের পূর্বদিকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল_ 'সিলেট উন্নয়নের রূপকার সাইফুর রহমান : ছবি কথা বলে'।
জনসভার কর্দমাক্ত মাঠেও মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। মাঠের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। 
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে এই মাদ্রাসা মাঠে বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দুই বছর পর একই মাঠে তার অনুপস্থিতিতে জনসভায় সব বক্তাই তাকে স্মরণ করেন এবং অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
জনসভায় ১৮ দলীয় নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামা ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাম্মী আখতার এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লুদি প্রমুখ বক্তব্য দেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার। জনসভার শুরুতেই সিলেটবাসীর উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। একটা দাবিও আছে। সেটা কী জানেন? বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক। শহীদ জিয়া এ সিলেটের পুণ্যভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। সেখানে আমাদের শমসের মবিনও ছিলেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, মেয়র আরিফকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। আগামীতে সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন। ক্ষমতায় গেলে সিলেটের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথাও জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি জোট আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন, সিলেট চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টায় দ্রুত ট্রেন সার্ভিস ও একটি ইপিজেড করা হবে। এ সময় জনসভায় স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পরে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলেন। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারও চাকরি যাবে না। বরং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বদলি করা হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, তারা সুবিচার পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বহু মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এর জবাব দিতে হবে। পিলখানা বিদ্রোহের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় তারা কোনো গুলি চালাতে পারেনি। ভাইদের বাঁচাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তিনি হেফাজতের সমাবেশে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাপের চেয়েও খারাপ। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে করা যায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এতে করে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে টিপাইমুখ বাঁধও হতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায়? অবিলম্বে তাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
স্বামীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান লুনার : স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান জানান সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লুনা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার জনসভায় তার আসার কথা ছিল না। এসেছেন শুধু সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। লুনা বলেন, তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সহযোগিতা। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। সিলেটবাসীর কাছে বিচার রেখে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিচার আপনাদের কাছে দিলাম। আপনারা বিচার করবেন।
শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে খালেদা জিয়া : জনসভার আগেই হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বেগম জিয়া। বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জিয়ারত করেন শাহজালালের মাজার। দুই মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়া বেলা ৩টায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
ইলিয়াসের শূন্যতা : জনসভায় প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গত বছরের ১১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রোডমার্চ করে সিলেটে আসেন খালেদা জিয়া। ওই জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। কিন্তু এ জনসভায় মঞ্চে ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস আলীর এই শূন্যতা অনুধাবন করেন প্রত্যেক বক্তা তাদের স্ব স্ব বক্তৃতায়।
জোট নেতাদের বক্তব্য : কর্নেল অলি আহমদ বলেন, জাতির এই দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালিদের হাত থেকে দেশকে চিরতরে মুক্ত করতে হবে। আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের হাতে আর মাত্র ৪৮০ ঘণ্টা সময় আছে। এরপর তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। সিটি নির্বাচনে সিলেটবাসী ইলিয়াস আলী গুমের জবাব দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের আর মাত্র ২০ দিন বাকি। এখন শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে চলবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। সরকার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20179#sthash.YDNq7OWc.dpuf
মাহমুদ আজহার ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে
পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি' গঠন করে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্র্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে এখন থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করা হবে।' রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এটা উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ১৮ দলীয় জোট এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সিলেটসহ সারা দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন বেগম জিয়া। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবির আকুতি ছিল বিরোধীদলীয় নেতাসহ প্রায় সব বক্তার কণ্ঠেই। এদিকে জনসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বেগম জিয়া।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিদেশিদের চাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এককভাবে নির্বাচন করলে তা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সংবিধান অনুসরণ করে আপনি বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে রাজি হলেন না কেন? ২০০৭ সালের নির্বাচন মানলে আমরাও আজকে আপনার কথা মেনে নিতাম। আপনি তো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আপনার অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? এ জন্যই আপনার অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই চিৎকার করেন না কেন, আপনাকে বিদায় নিতেই হবে।
২৪ অক্টোবরের পর জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সময় শেষ। এ সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ২৫ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনার দলের অনেকে এখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে পকেটে টিকিট কেটে ওপেন ভিসা নিয়ে ঘুরছেন। সংগ্রাম কমিটি হলে আপনি দেখবেন আপনার বামে, ডানে, সামনে, পেছনে কেউ নেই। তখন কেবল আমরাই থাকব। আমরাই আপনাকে রক্ষা করব। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে রাখব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এখনো বলছি, আপনি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। যত দিন মেয়াদ আছে, আপনারা থাকুন। তবে একক নির্বাচন হলে রাজপথে দেখা হবে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জনসভার চারপাশে ছিল নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে তার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ইলিয়াস আলীর ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল নিজেই ডিজিটাল ব্যানারে মডেল হয়। তার আকুতি ছিল_ 'আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দাও'। ইলিয়াস আলীর ডিজিটাল ব্যানারের পাশাপাশি মাঠের পূর্বদিকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল_ 'সিলেট উন্নয়নের রূপকার সাইফুর রহমান : ছবি কথা বলে'।
জনসভার কর্দমাক্ত মাঠেও মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। মাঠের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। 
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে এই মাদ্রাসা মাঠে বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দুই বছর পর একই মাঠে তার অনুপস্থিতিতে জনসভায় সব বক্তাই তাকে স্মরণ করেন এবং অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
জনসভায় ১৮ দলীয় নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামা ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাম্মী আখতার এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লুদি প্রমুখ বক্তব্য দেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার। জনসভার শুরুতেই সিলেটবাসীর উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। একটা দাবিও আছে। সেটা কী জানেন? বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক। শহীদ জিয়া এ সিলেটের পুণ্যভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। সেখানে আমাদের শমসের মবিনও ছিলেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, মেয়র আরিফকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। আগামীতে সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন। ক্ষমতায় গেলে সিলেটের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথাও জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি জোট আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন, সিলেট চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টায় দ্রুত ট্রেন সার্ভিস ও একটি ইপিজেড করা হবে। এ সময় জনসভায় স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পরে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলেন। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারও চাকরি যাবে না। বরং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বদলি করা হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, তারা সুবিচার পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বহু মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এর জবাব দিতে হবে। পিলখানা বিদ্রোহের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় তারা কোনো গুলি চালাতে পারেনি। ভাইদের বাঁচাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তিনি হেফাজতের সমাবেশে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাপের চেয়েও খারাপ। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে করা যায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এতে করে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে টিপাইমুখ বাঁধও হতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায়? অবিলম্বে তাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
স্বামীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান লুনার : স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান জানান সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লুনা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার জনসভায় তার আসার কথা ছিল না। এসেছেন শুধু সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। লুনা বলেন, তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সহযোগিতা। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। সিলেটবাসীর কাছে বিচার রেখে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিচার আপনাদের কাছে দিলাম। আপনারা বিচার করবেন।
শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে খালেদা জিয়া : জনসভার আগেই হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বেগম জিয়া। বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জিয়ারত করেন শাহজালালের মাজার। দুই মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়া বেলা ৩টায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
ইলিয়াসের শূন্যতা : জনসভায় প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গত বছরের ১১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রোডমার্চ করে সিলেটে আসেন খালেদা জিয়া। ওই জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। কিন্তু এ জনসভায় মঞ্চে ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস আলীর এই শূন্যতা অনুধাবন করেন প্রত্যেক বক্তা তাদের স্ব স্ব বক্তৃতায়।
জোট নেতাদের বক্তব্য : কর্নেল অলি আহমদ বলেন, জাতির এই দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালিদের হাত থেকে দেশকে চিরতরে মুক্ত করতে হবে। আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের হাতে আর মাত্র ৪৮০ ঘণ্টা সময় আছে। এরপর তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। সিটি নির্বাচনে সিলেটবাসী ইলিয়াস আলী গুমের জবাব দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের আর মাত্র ২০ দিন বাকি। এখন শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে চলবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। সরকার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20179#sthash.YDNq7OWc.dpuf
মাহমুদ আজহার ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে
পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি' গঠন করে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্র্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে এখন থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করা হবে।' রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এটা উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ১৮ দলীয় জোট এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সিলেটসহ সারা দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন বেগম জিয়া। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবির আকুতি ছিল বিরোধীদলীয় নেতাসহ প্রায় সব বক্তার কণ্ঠেই। এদিকে জনসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বেগম জিয়া।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিদেশিদের চাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এককভাবে নির্বাচন করলে তা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সংবিধান অনুসরণ করে আপনি বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে রাজি হলেন না কেন? ২০০৭ সালের নির্বাচন মানলে আমরাও আজকে আপনার কথা মেনে নিতাম। আপনি তো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আপনার অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? এ জন্যই আপনার অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই চিৎকার করেন না কেন, আপনাকে বিদায় নিতেই হবে।
২৪ অক্টোবরের পর জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সময় শেষ। এ সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ২৫ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনার দলের অনেকে এখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে পকেটে টিকিট কেটে ওপেন ভিসা নিয়ে ঘুরছেন। সংগ্রাম কমিটি হলে আপনি দেখবেন আপনার বামে, ডানে, সামনে, পেছনে কেউ নেই। তখন কেবল আমরাই থাকব। আমরাই আপনাকে রক্ষা করব। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে রাখব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এখনো বলছি, আপনি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। যত দিন মেয়াদ আছে, আপনারা থাকুন। তবে একক নির্বাচন হলে রাজপথে দেখা হবে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জনসভার চারপাশে ছিল নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে তার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ইলিয়াস আলীর ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল নিজেই ডিজিটাল ব্যানারে মডেল হয়। তার আকুতি ছিল_ 'আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দাও'। ইলিয়াস আলীর ডিজিটাল ব্যানারের পাশাপাশি মাঠের পূর্বদিকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল_ 'সিলেট উন্নয়নের রূপকার সাইফুর রহমান : ছবি কথা বলে'।
জনসভার কর্দমাক্ত মাঠেও মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। মাঠের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। 
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে এই মাদ্রাসা মাঠে বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দুই বছর পর একই মাঠে তার অনুপস্থিতিতে জনসভায় সব বক্তাই তাকে স্মরণ করেন এবং অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
জনসভায় ১৮ দলীয় নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামা ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাম্মী আখতার এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লুদি প্রমুখ বক্তব্য দেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার। জনসভার শুরুতেই সিলেটবাসীর উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। একটা দাবিও আছে। সেটা কী জানেন? বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক। শহীদ জিয়া এ সিলেটের পুণ্যভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। সেখানে আমাদের শমসের মবিনও ছিলেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, মেয়র আরিফকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। আগামীতে সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন। ক্ষমতায় গেলে সিলেটের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথাও জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি জোট আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন, সিলেট চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টায় দ্রুত ট্রেন সার্ভিস ও একটি ইপিজেড করা হবে। এ সময় জনসভায় স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পরে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলেন। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারও চাকরি যাবে না। বরং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বদলি করা হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, তারা সুবিচার পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বহু মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এর জবাব দিতে হবে। পিলখানা বিদ্রোহের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় তারা কোনো গুলি চালাতে পারেনি। ভাইদের বাঁচাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তিনি হেফাজতের সমাবেশে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাপের চেয়েও খারাপ। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে করা যায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এতে করে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে টিপাইমুখ বাঁধও হতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায়? অবিলম্বে তাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
স্বামীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান লুনার : স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান জানান সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লুনা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার জনসভায় তার আসার কথা ছিল না। এসেছেন শুধু সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। লুনা বলেন, তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সহযোগিতা। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। সিলেটবাসীর কাছে বিচার রেখে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিচার আপনাদের কাছে দিলাম। আপনারা বিচার করবেন।
শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে খালেদা জিয়া : জনসভার আগেই হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বেগম জিয়া। বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জিয়ারত করেন শাহজালালের মাজার। দুই মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়া বেলা ৩টায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
ইলিয়াসের শূন্যতা : জনসভায় প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গত বছরের ১১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রোডমার্চ করে সিলেটে আসেন খালেদা জিয়া। ওই জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। কিন্তু এ জনসভায় মঞ্চে ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস আলীর এই শূন্যতা অনুধাবন করেন প্রত্যেক বক্তা তাদের স্ব স্ব বক্তৃতায়।
জোট নেতাদের বক্তব্য : কর্নেল অলি আহমদ বলেন, জাতির এই দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালিদের হাত থেকে দেশকে চিরতরে মুক্ত করতে হবে। আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের হাতে আর মাত্র ৪৮০ ঘণ্টা সময় আছে। এরপর তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। সিটি নির্বাচনে সিলেটবাসী ইলিয়াস আলী গুমের জবাব দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের আর মাত্র ২০ দিন বাকি। এখন শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে চলবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। সরকার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20179#sthash.YDNq7OWc.dpufমাহমুদ আজহার ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে
পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি' গঠন করে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্র্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে এখন থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করা হবে।' রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এটা উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ১৮ দলীয় জোট এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সিলেটসহ সারা দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন বেগম জিয়া। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবির আকুতি ছিল বিরোধীদলীয় নেতাসহ প্রায় সব বক্তার কণ্ঠেই। এদিকে জনসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বেগম জিয়া।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিদেশিদের চাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এককভাবে নির্বাচন করলে তা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সংবিধান অনুসরণ করে আপনি বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে রাজি হলেন না কেন? ২০০৭ সালের নির্বাচন মানলে আমরাও আজকে আপনার কথা মেনে নিতাম। আপনি তো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আপনার অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? এ জন্যই আপনার অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই চিৎকার করেন না কেন, আপনাকে বিদায় নিতেই হবে।
২৪ অক্টোবরের পর জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সময় শেষ। এ সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ২৫ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনার দলের অনেকে এখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে পকেটে টিকিট কেটে ওপেন ভিসা নিয়ে ঘুরছেন। সংগ্রাম কমিটি হলে আপনি দেখবেন আপনার বামে, ডানে, সামনে, পেছনে কেউ নেই। তখন কেবল আমরাই থাকব। আমরাই আপনাকে রক্ষা করব। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে রাখব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এখনো বলছি, আপনি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। যত দিন মেয়াদ আছে, আপনারা থাকুন। তবে একক নির্বাচন হলে রাজপথে দেখা হবে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জনসভার চারপাশে ছিল নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে তার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ইলিয়াস আলীর ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল নিজেই ডিজিটাল ব্যানারে মডেল হয়। তার আকুতি ছিল_ 'আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দাও'। ইলিয়াস আলীর ডিজিটাল ব্যানারের পাশাপাশি মাঠের পূর্বদিকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল_ 'সিলেট উন্নয়নের রূপকার সাইফুর রহমান : ছবি কথা বলে'।
জনসভার কর্দমাক্ত মাঠেও মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। মাঠের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। 
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে এই মাদ্রাসা মাঠে বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দুই বছর পর একই মাঠে তার অনুপস্থিতিতে জনসভায় সব বক্তাই তাকে স্মরণ করেন এবং অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
জনসভায় ১৮ দলীয় নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামা ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাম্মী আখতার এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লুদি প্রমুখ বক্তব্য দেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার। জনসভার শুরুতেই সিলেটবাসীর উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। একটা দাবিও আছে। সেটা কী জানেন? বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক। শহীদ জিয়া এ সিলেটের পুণ্যভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। সেখানে আমাদের শমসের মবিনও ছিলেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, মেয়র আরিফকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। আগামীতে সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন। ক্ষমতায় গেলে সিলেটের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথাও জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি জোট আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন, সিলেট চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টায় দ্রুত ট্রেন সার্ভিস ও একটি ইপিজেড করা হবে। এ সময় জনসভায় স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পরে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলেন। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারও চাকরি যাবে না। বরং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বদলি করা হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, তারা সুবিচার পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বহু মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এর জবাব দিতে হবে। পিলখানা বিদ্রোহের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় তারা কোনো গুলি চালাতে পারেনি। ভাইদের বাঁচাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তিনি হেফাজতের সমাবেশে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাপের চেয়েও খারাপ। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে করা যায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এতে করে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে টিপাইমুখ বাঁধও হতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায়? অবিলম্বে তাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
স্বামীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান লুনার : স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান জানান সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লুনা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার জনসভায় তার আসার কথা ছিল না। এসেছেন শুধু সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। লুনা বলেন, তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সহযোগিতা। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। সিলেটবাসীর কাছে বিচার রেখে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিচার আপনাদের কাছে দিলাম। আপনারা বিচার করবেন।
শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে খালেদা জিয়া : জনসভার আগেই হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বেগম জিয়া। বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জিয়ারত করেন শাহজালালের মাজার। দুই মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়া বেলা ৩টায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
ইলিয়াসের শূন্যতা : জনসভায় প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গত বছরের ১১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রোডমার্চ করে সিলেটে আসেন খালেদা জিয়া। ওই জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। কিন্তু এ জনসভায় মঞ্চে ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস আলীর এই শূন্যতা অনুধাবন করেন প্রত্যেক বক্তা তাদের স্ব স্ব বক্তৃতায়।
জোট নেতাদের বক্তব্য : কর্নেল অলি আহমদ বলেন, জাতির এই দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালিদের হাত থেকে দেশকে চিরতরে মুক্ত করতে হবে। আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের হাতে আর মাত্র ৪৮০ ঘণ্টা সময় আছে। এরপর তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। সিটি নির্বাচনে সিলেটবাসী ইলিয়াস আলী গুমের জবাব দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের আর মাত্র ২০ দিন বাকি। এখন শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে চলবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। সরকার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20179#sthash.YDNq7OWc.dpuf
মাহমুদ আজহার ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে
পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি' গঠন করে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্র্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে এখন থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করা হবে।' রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এটা উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ১৮ দলীয় জোট এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সিলেটসহ সারা দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন বেগম জিয়া। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবির আকুতি ছিল বিরোধীদলীয় নেতাসহ প্রায় সব বক্তার কণ্ঠেই। এদিকে জনসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বেগম জিয়া।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিদেশিদের চাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এককভাবে নির্বাচন করলে তা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সংবিধান অনুসরণ করে আপনি বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে রাজি হলেন না কেন? ২০০৭ সালের নির্বাচন মানলে আমরাও আজকে আপনার কথা মেনে নিতাম। আপনি তো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আপনার অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? এ জন্যই আপনার অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই চিৎকার করেন না কেন, আপনাকে বিদায় নিতেই হবে।
২৪ অক্টোবরের পর জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সময় শেষ। এ সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ২৫ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনার দলের অনেকে এখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে পকেটে টিকিট কেটে ওপেন ভিসা নিয়ে ঘুরছেন। সংগ্রাম কমিটি হলে আপনি দেখবেন আপনার বামে, ডানে, সামনে, পেছনে কেউ নেই। তখন কেবল আমরাই থাকব। আমরাই আপনাকে রক্ষা করব। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে রাখব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এখনো বলছি, আপনি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। যত দিন মেয়াদ আছে, আপনারা থাকুন। তবে একক নির্বাচন হলে রাজপথে দেখা হবে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জনসভার চারপাশে ছিল নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে তার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ইলিয়াস আলীর ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল নিজেই ডিজিটাল ব্যানারে মডেল হয়। তার আকুতি ছিল_ 'আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দাও'। ইলিয়াস আলীর ডিজিটাল ব্যানারের পাশাপাশি মাঠের পূর্বদিকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল_ 'সিলেট উন্নয়নের রূপকার সাইফুর রহমান : ছবি কথা বলে'।
জনসভার কর্দমাক্ত মাঠেও মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। মাঠের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। 
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে এই মাদ্রাসা মাঠে বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দুই বছর পর একই মাঠে তার অনুপস্থিতিতে জনসভায় সব বক্তাই তাকে স্মরণ করেন এবং অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
জনসভায় ১৮ দলীয় নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামা ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাম্মী আখতার এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লুদি প্রমুখ বক্তব্য দেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার। জনসভার শুরুতেই সিলেটবাসীর উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। একটা দাবিও আছে। সেটা কী জানেন? বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক। শহীদ জিয়া এ সিলেটের পুণ্যভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। সেখানে আমাদের শমসের মবিনও ছিলেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, মেয়র আরিফকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। আগামীতে সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন। ক্ষমতায় গেলে সিলেটের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথাও জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি জোট আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন, সিলেট চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টায় দ্রুত ট্রেন সার্ভিস ও একটি ইপিজেড করা হবে। এ সময় জনসভায় স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পরে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলেন। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারও চাকরি যাবে না। বরং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বদলি করা হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, তারা সুবিচার পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বহু মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এর জবাব দিতে হবে। পিলখানা বিদ্রোহের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় তারা কোনো গুলি চালাতে পারেনি। ভাইদের বাঁচাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তিনি হেফাজতের সমাবেশে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাপের চেয়েও খারাপ। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে করা যায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এতে করে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে টিপাইমুখ বাঁধও হতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায়? অবিলম্বে তাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
স্বামীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান লুনার : স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান জানান সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লুনা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার জনসভায় তার আসার কথা ছিল না। এসেছেন শুধু সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। লুনা বলেন, তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সহযোগিতা। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। সিলেটবাসীর কাছে বিচার রেখে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিচার আপনাদের কাছে দিলাম। আপনারা বিচার করবেন।
শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে খালেদা জিয়া : জনসভার আগেই হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বেগম জিয়া। বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জিয়ারত করেন শাহজালালের মাজার। দুই মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়া বেলা ৩টায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
ইলিয়াসের শূন্যতা : জনসভায় প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গত বছরের ১১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রোডমার্চ করে সিলেটে আসেন খালেদা জিয়া। ওই জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। কিন্তু এ জনসভায় মঞ্চে ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস আলীর এই শূন্যতা অনুধাবন করেন প্রত্যেক বক্তা তাদের স্ব স্ব বক্তৃতায়।
জোট নেতাদের বক্তব্য : কর্নেল অলি আহমদ বলেন, জাতির এই দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালিদের হাত থেকে দেশকে চিরতরে মুক্ত করতে হবে। আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের হাতে আর মাত্র ৪৮০ ঘণ্টা সময় আছে। এরপর তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। সিটি নির্বাচনে সিলেটবাসী ইলিয়াস আলী গুমের জবাব দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের আর মাত্র ২০ দিন বাকি। এখন শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে চলবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। সরকার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20179#sthash.YDNq7OWc.dpuf
মাহমুদ আজহার ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে
পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি' গঠন করে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্র্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে এখন থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করা হবে।' রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এটা উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ১৮ দলীয় জোট এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সিলেটসহ সারা দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন বেগম জিয়া। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবির আকুতি ছিল বিরোধীদলীয় নেতাসহ প্রায় সব বক্তার কণ্ঠেই। এদিকে জনসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বেগম জিয়া।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিদেশিদের চাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এককভাবে নির্বাচন করলে তা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সংবিধান অনুসরণ করে আপনি বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে রাজি হলেন না কেন? ২০০৭ সালের নির্বাচন মানলে আমরাও আজকে আপনার কথা মেনে নিতাম। আপনি তো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আপনার অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? এ জন্যই আপনার অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই চিৎকার করেন না কেন, আপনাকে বিদায় নিতেই হবে।
২৪ অক্টোবরের পর জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সময় শেষ। এ সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ২৫ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনার দলের অনেকে এখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে পকেটে টিকিট কেটে ওপেন ভিসা নিয়ে ঘুরছেন। সংগ্রাম কমিটি হলে আপনি দেখবেন আপনার বামে, ডানে, সামনে, পেছনে কেউ নেই। তখন কেবল আমরাই থাকব। আমরাই আপনাকে রক্ষা করব। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে রাখব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এখনো বলছি, আপনি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। যত দিন মেয়াদ আছে, আপনারা থাকুন। তবে একক নির্বাচন হলে রাজপথে দেখা হবে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জনসভার চারপাশে ছিল নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে তার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ইলিয়াস আলীর ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল নিজেই ডিজিটাল ব্যানারে মডেল হয়। তার আকুতি ছিল_ 'আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দাও'। ইলিয়াস আলীর ডিজিটাল ব্যানারের পাশাপাশি মাঠের পূর্বদিকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল_ 'সিলেট উন্নয়নের রূপকার সাইফুর রহমান : ছবি কথা বলে'।
জনসভার কর্দমাক্ত মাঠেও মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। মাঠের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। 
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে এই মাদ্রাসা মাঠে বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দুই বছর পর একই মাঠে তার অনুপস্থিতিতে জনসভায় সব বক্তাই তাকে স্মরণ করেন এবং অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
জনসভায় ১৮ দলীয় নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামা ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাম্মী আখতার এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লুদি প্রমুখ বক্তব্য দেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার। জনসভার শুরুতেই সিলেটবাসীর উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। একটা দাবিও আছে। সেটা কী জানেন? বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক। শহীদ জিয়া এ সিলেটের পুণ্যভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। সেখানে আমাদের শমসের মবিনও ছিলেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, মেয়র আরিফকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। আগামীতে সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন। ক্ষমতায় গেলে সিলেটের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথাও জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি জোট আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন, সিলেট চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টায় দ্রুত ট্রেন সার্ভিস ও একটি ইপিজেড করা হবে। এ সময় জনসভায় স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পরে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলেন। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারও চাকরি যাবে না। বরং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বদলি করা হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, তারা সুবিচার পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বহু মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এর জবাব দিতে হবে। পিলখানা বিদ্রোহের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় তারা কোনো গুলি চালাতে পারেনি। ভাইদের বাঁচাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তিনি হেফাজতের সমাবেশে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাপের চেয়েও খারাপ। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে করা যায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এতে করে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে টিপাইমুখ বাঁধও হতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায়? অবিলম্বে তাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
স্বামীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান লুনার : স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান জানান সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লুনা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার জনসভায় তার আসার কথা ছিল না। এসেছেন শুধু সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। লুনা বলেন, তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সহযোগিতা। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। সিলেটবাসীর কাছে বিচার রেখে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিচার আপনাদের কাছে দিলাম। আপনারা বিচার করবেন।
শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে খালেদা জিয়া : জনসভার আগেই হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বেগম জিয়া। বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জিয়ারত করেন শাহজালালের মাজার। দুই মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়া বেলা ৩টায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
ইলিয়াসের শূন্যতা : জনসভায় প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গত বছরের ১১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রোডমার্চ করে সিলেটে আসেন খালেদা জিয়া। ওই জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। কিন্তু এ জনসভায় মঞ্চে ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস আলীর এই শূন্যতা অনুধাবন করেন প্রত্যেক বক্তা তাদের স্ব স্ব বক্তৃতায়।
জোট নেতাদের বক্তব্য : কর্নেল অলি আহমদ বলেন, জাতির এই দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালিদের হাত থেকে দেশকে চিরতরে মুক্ত করতে হবে। আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের হাতে আর মাত্র ৪৮০ ঘণ্টা সময় আছে। এরপর তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। সিটি নির্বাচনে সিলেটবাসী ইলিয়াস আলী গুমের জবাব দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের আর মাত্র ২০ দিন বাকি। এখন শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে চলবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। সরকার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20179#sthash.YDNq7OWc.dpuf
মাহমুদ আজহার ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে
পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় দাঁড়িয়ে একতরফা নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি' গঠন করে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্র্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে এখন থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করা হবে।' রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এটা উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ১৮ দলীয় জোট এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সিলেটসহ সারা দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন বেগম জিয়া। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবির আকুতি ছিল বিরোধীদলীয় নেতাসহ প্রায় সব বক্তার কণ্ঠেই। এদিকে জনসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বেগম জিয়া।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিদেশিদের চাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এককভাবে নির্বাচন করলে তা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এককভাবে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সংবিধান অনুসরণ করে আপনি বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে রাজি হলেন না কেন? ২০০৭ সালের নির্বাচন মানলে আমরাও আজকে আপনার কথা মেনে নিতাম। আপনি তো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আপনার অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? এ জন্যই আপনার অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই চিৎকার করেন না কেন, আপনাকে বিদায় নিতেই হবে।
২৪ অক্টোবরের পর জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সময় শেষ। এ সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ২৫ অক্টোবর থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনার দলের অনেকে এখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে পকেটে টিকিট কেটে ওপেন ভিসা নিয়ে ঘুরছেন। সংগ্রাম কমিটি হলে আপনি দেখবেন আপনার বামে, ডানে, সামনে, পেছনে কেউ নেই। তখন কেবল আমরাই থাকব। আমরাই আপনাকে রক্ষা করব। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে রাখব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এখনো বলছি, আপনি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। যত দিন মেয়াদ আছে, আপনারা থাকুন। তবে একক নির্বাচন হলে রাজপথে দেখা হবে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জনসভার চারপাশে ছিল নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে তার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে ইলিয়াস আলীর ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল নিজেই ডিজিটাল ব্যানারে মডেল হয়। তার আকুতি ছিল_ 'আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দাও'। ইলিয়াস আলীর ডিজিটাল ব্যানারের পাশাপাশি মাঠের পূর্বদিকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল_ 'সিলেট উন্নয়নের রূপকার সাইফুর রহমান : ছবি কথা বলে'।
জনসভার কর্দমাক্ত মাঠেও মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। মাঠের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। 
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে এই মাদ্রাসা মাঠে বিরোধীদলীয় নেতা জনসভা করেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দুই বছর পর একই মাঠে তার অনুপস্থিতিতে জনসভায় সব বক্তাই তাকে স্মরণ করেন এবং অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
জনসভায় ১৮ দলীয় নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামা ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাম্মী আখতার এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লুদি প্রমুখ বক্তব্য দেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার। জনসভার শুরুতেই সিলেটবাসীর উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। একটা দাবিও আছে। সেটা কী জানেন? বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক। শহীদ জিয়া এ সিলেটের পুণ্যভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। সেখানে আমাদের শমসের মবিনও ছিলেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, মেয়র আরিফকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। আগামীতে সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন। ক্ষমতায় গেলে সিলেটের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথাও জানান বেগম জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি জোট আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন, সিলেট চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টায় দ্রুত ট্রেন সার্ভিস ও একটি ইপিজেড করা হবে। এ সময় জনসভায় স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পরে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলেন। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারও চাকরি যাবে না। বরং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বদলি করা হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, তারা সুবিচার পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বহু মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এর জবাব দিতে হবে। পিলখানা বিদ্রোহের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় তারা কোনো গুলি চালাতে পারেনি। ভাইদের বাঁচাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তিনি হেফাজতের সমাবেশে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাপের চেয়েও খারাপ। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে করা যায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এতে করে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে টিপাইমুখ বাঁধও হতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায়? অবিলম্বে তাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
স্বামীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান লুনার : স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকার পতনের আহ্বান জানান সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লুনা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার জনসভায় তার আসার কথা ছিল না। এসেছেন শুধু সিলেটবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। লুনা বলেন, তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সহযোগিতা। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। সিলেটবাসীর কাছে বিচার রেখে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিচার আপনাদের কাছে দিলাম। আপনারা বিচার করবেন।
শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে খালেদা জিয়া : জনসভার আগেই হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বেগম জিয়া। বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে শাহপরানের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জিয়ারত করেন শাহজালালের মাজার। দুই মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়া বেলা ৩টায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
ইলিয়াসের শূন্যতা : জনসভায় প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গত বছরের ১১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রোডমার্চ করে সিলেটে আসেন খালেদা জিয়া। ওই জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। কিন্তু এ জনসভায় মঞ্চে ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস আলীর এই শূন্যতা অনুধাবন করেন প্রত্যেক বক্তা তাদের স্ব স্ব বক্তৃতায়।
জোট নেতাদের বক্তব্য : কর্নেল অলি আহমদ বলেন, জাতির এই দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালিদের হাত থেকে দেশকে চিরতরে মুক্ত করতে হবে। আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের হাতে আর মাত্র ৪৮০ ঘণ্টা সময় আছে। এরপর তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। সিটি নির্বাচনে সিলেটবাসী ইলিয়াস আলী গুমের জবাব দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের আর মাত্র ২০ দিন বাকি। এখন শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে চলবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। সরকার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/06/20179#sthash.YDNq7OWc.dpuf